Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > কবিতা > ১৬-৬-৮৪

১৬-৬-৮৪


নির্মলেন্দু গুণ

হয় নিদ্রা আসুক, না হয় এক্ষুনি অবসান হোক
এই অসহ রাত্রির । আমি আর সইতে পারছি না ।
আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে নির্ঘুমতা ।
এই রাত্রি এখন আমার সহ্যসীমার বাইরে ।
দুঃখে-ক্ষোভে, অভিমানে আমার বুকের ভিতর থেকে
বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস, যেন সমুদ্রের তলদেশ থেকে
শূন্য হাতে উঠে আসা কোনো ব্যর্থ ডুবুরী ।

চোখের ভিতরে হুল ফুটিয়ে বলি, একটু ঘুমাও,
আর কতক্ষণ, আর কতদিন এভাবে চলবে?
লক্ষীসোনা, মণি আমার, একটু ঘুমাও ।
মনকে বলি, এখন তো ছোট্ট ছেলেটি তুমি নও,
যে তোমাকে শোনাবে কেউ ঘুমপাড়ানিয়া গান ।
এখন তোমার ঘুমের জন্য কোন গান নেই ।
ভালোবাসার সাঁকো বেয়ে তুমি পৌছে গেছো এক
চির-নির্ঘুম দেশে, যেখানে দাউদাউ অগ্নিকুণ্ডে
জ্বলন্ত পৃথিবী; যেখানে নিদ্রা এক অচেনা প্রসঙ্গ ।

একশ' থেকে উল্টোদিকে শূণ্য পর্যন্ত গুনে
সেই কখন শেষ করেছি, তবু ঘুম আসে না ।
চিৎকার করে বলি, একশ এতো কম কেন?


দুঃখ আমাকে জাগিয়ে রাখে ।
আনন্দের সাধ্য কী সে পাল্লা দেবে
দুঃখের সঙ্গে, দুঃখ খুব জাগরণ ভালোবাসে ।
হায় আমার দিনগুলি রাতের সঙ্গে, আর
রাতগুলি দিনের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ।
একটি দিনকে অন্যদিন থেকে পৃথক করে যে-নিদ্রা,
সে-ই যদি অন্তর্হিত হয়, তবে কীভাবে আমি
অনুভব করি আমার সপ্রাণতা?
আমার কাঁধে চেপে বসেছে অখণ্ড সময়ের বোঝা ।
চিৎকার করে বলি, 'এ বোঝা আমার নামাও ।'

তুমি কি কিছু শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে আছো?
প্রত্যাশা করছো কেউ তোমাকে কিছু বলবে?
কেউ তোমাকে কিচ্ছু বলবেনা, লক্ষীসোনা ভাই,
আমি বলছি, তুমি ঘুমাও । আরও একটু ভাবো,
বিশ্লেষণ করে দেখার চেষ্টা করো তোমার অস্তিত্ব;
'ভালোবাসা' শব্দিটিকে নাড়াচাড়া করে দেখো ।

হয়তো একটু হলেই রহস্যের সূত্র পেয়ে যাবে,
চোখের সামনেই খুলে যাবে অন্ধকারের তালা,
আর তুমি পেয়ে যাবে তোমার ঘুম-নগরীর চাবি ।
বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া নকল নিদ্রা নয়,
তাকে তুমি ভিতর থেকে জাগাও ।


আমার খোলা আকাশের মতো চোখে
উড়ে বেড়ায় হরেক রঙের পাখি ।
আমার মস্তিষ্কের গভীর গোপন কুঠুরিতে
আজস্র পরীর দল প্রলয় নৃত্যে মাতে ।
স্বপ্ন-প্রেম, কামনা-বাসনা, স্মৃতি-বিস্মৃতির
জটাজলে বন্দী আমার রাত্রির পৃথিবী ।

আমি সেই জট খুলতে খুলতে ক্লান্ত হই,
ক্লান্ত হই; কিন্তু আমার ঘুম আসে না ।
আমার আত্মার অন্তর্ভেদী আর্তনাদে
ঘরের দেয়ালগুলি কাঁপে ।

রাতজাগা টিকটিকি ও আরশোলার মতো
আমি দেয়ালে-দেয়ালে অস্থির ছুটে যাই ।
শেষবারের মতো রাতের উদ্দেশে
আমার শেষ-তর্জনী তুলে বলি;
'হয় অবসান হোক এই দুঃসহ রাত্রির,
না হয় নিদ্রা আসুক ।'


সাহিত্য >> কবিতা