স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্রনিক ঠাণ্ডা লাগা, বুকে শ্লেষ্মা জমে থাকার সূত্র ধরেই পরতে হয় নিউমোনিয়ায়। বর্ষার পর হঠাৎ গরম তাতেই এই অসুখের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। ঠাণ্ডা লাগলেই যে সবার নিউমোনিয়া হবে তা কিন্তু নয়, তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, মূলত বয়স্ক ও শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
ফুসফুসের সংক্রমণের প্রভাবে যেসব রোগ হয় তার অন্যতম হলো নিউমোনিয়া। এই অসুখে ফুসফুসে প্রদাহ তৈরি হয়, অনেক সময় পানিও জমতে পারে ফুসফুসে। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের অন্যতম কারণ হলেও ভাইরাস বা ছত্রাকের প্রভাবেও এই অসুখ দানা বাঁধে শরীরে।
নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ খুব জ্বর। ওষুধে জ্বর নামলেও আবার ওষুধের প্রভাব কাটলেই করে বেড়ে যায় জ্বর। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি উঠতে পারে জ্বর। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি তো থাকেই। অনেক সময় মাথা যন্ত্রণা, ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা এসবও নিউমোনিয়ার লক্ষণ। তবে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে ছুঁলেই নিউমোনিয়ার জীবাণু শরীরে ছড়ায় না। তবে আক্রান্তের কাশি বা হাঁচি থেকে তা ছড়াতে পারে।
তবে সর্দি-জ্বরের সঙ্গে নিউমোনিয়ার বেশ কিছু তফাৎ থাকে। একটু লক্ষ্য রাখলেই তাই রোগ নির্ণয় করা সহজ।
চিকিৎসকের মতে, প্রাথমিকভাবে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি দিয়ে এই রোগ শুরু হলেও দেখা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জ্বর, শ্বাসকষ্ট বাড়ছে, কাশিও বাড়ছে। অনেক সময় জ্বরের ওষুধের কড়া ডোজে জ্বর নামলেও ফিরে ফিরে আসে তা। অবস্থা গুরুতর হলে কাশির সঙ্গে রক্তও উঠতে পারে।
এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা। তবু নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা করাতে হয়।
অসুখের সময় সতর্কতা
* রোগীকে ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকেও দূরে রাখতে হবে।
* পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন নিউমোনিয়া রোগীর জন্য খারাপ। তাই প্রচুর পানি ও ফ্লুয়িড জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে রোগীকে।
* আক্রান্ত রোগীকে ধূমপান থেকে দূরে রাখতেই হবে।
* জ্বর কমানোর ওষুধ ঘন ঘন খাইয়ে জ্বর নামানোর চেষ্টা না করে বরং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
* অ্যাজমা থাকলে ইনহেলার সঙ্গে রাখুন। চিকিৎসকের নির্দেশ মতো ব্যবহারের বিধি-নিষেধ মানতে হবে।
* হার্ট ও লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগী ও ডায়াবেটিকরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিউমোনিয়া প্রতিরোধক টিকা নিতে পারেন।
* সাধারণত দু’ সপ্তাহ সময়ে এই রোগের ধাক্কা অনেকটাই সামলে ওঠেন রোগী। তবে তারচেয়ে বেশি দেরি হলে অবশ্যই হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
* দূরে রাখতে হবে যে কোন দূষণ থেকেও। ধোঁয়া, ধূলাবালি, মশা মারার কয়েল রোগীর ঘর থেকে বাদ দিতে হবে।