BD Trade Blogs
> Blogs > কবিতা > ভালোবেসে বন্দিনী

ভালোবেসে বন্দিনী


অসীম তরফদার

নিজেই পাঠিয়ে কারাগারে আজ আবার দেখতে এসেছো মা?
মেয়ের জন্য সত্যি তোমার দরদ কত দরোজা খোলা!

দর্শনার্থী ঘরের শিকের ওপারে দাঁড়িয়ে
প্রতীক্ষায় পার হবে ঘন্টার পর ঘন্টা
কিন্তু কিছুতেই পাবে না তুমি আমার দেখা।
হ্যাঁ, মা, আমি তোমারই মেয়ে,
যাকে তুমি গর্ভে ধারণ করেছো,
দেখিয়েছো পৃথিবীর রূপ রস আলো,
ভালোবেসে যে অবাধ্য হয়েছে তোমাদের-
চলে গেছে যে প্রেমিকের হাত ধরে,
তার প্রতিশোধ র্স্পহায় দাঁড় করিয়েছো কাঠগড়ায়!

আমার ষোড়শ বয়সে শারদীয়া নবমীর রাতে আরতির ক্ষণে
বর্ণিল আলোকের ছটায়, ধূপের ধোয়ায় বাদ্যের তালে
আরতির বিমতূর্  ছন্দে মোহময় পরিবেশ;
অসংখ্য মানুষের ভীড়ে আচম্বিতে মনে হলো
এক জোড়া চোখের দুর্নিবার টানে হারিয়ে গেছি আমি;
অথচ সেই দুটি চোখ একবারও দেখল না আমায়
ভালো করে, গুরুত্ব দিয়ে।

পৌষের উত্তরী বায়ে হারায় হেমন্তের দিন
ষোড়শী মনের কুঞ্জে কত ফুল ফোটে ঝরে যায়
তবু অন্তরে কাটার মত বিঁধে থাকে
সেদিনের সেই দেখা চোখ দু’টি;
আর আমি যেন কেবলই পতঙ্গেঁর মত পুড়ে মরলাম
তার অবহেলা এবং উপেক্ষার অনলে।
একদিন কয়ুশাভাঙা শীতের প্রভাতে হঠাৎ
আবার দেখলাম সেই চোখ দুটো-
যেন বিদগ্ধ হৃদয় শীতল হলো নিমেষেই
তার অকৃপন স্নেহে, প্রেমে, মমতায়, আলিঙ্গঁনে।
আর তার প্রেমার্ত স্রোতের টানে আমি
তার হৃদয়পুরে হলাম বন্দিনী।

রূপে গুণে কর্মে সুযোগ্য সেই শুদ্রের ছেলে
তোমাদের ব্রাম্মন কূলে কেবলই
অস্পৃশ্য ঘৃণ্য সে জন্ম অভিশাপে।
এই হীন ভাবনার সাথে পারিনি একাত্ম হতে;
আমার শিক্ষা, দর্শন, জাগ্রত বিবেক নেয়নি মেনে
বৈষম্যের বিদ্বেষে ভরা তোমাদের ভ্রান্ত নীতিকে।
কৌলিন্যের মিথ্যে অহমের গ্রীবায় থুঁথু ছিটিয়ে তাই
চলে যাই আমার কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার কাছে;
সীমন্ত রাঙাই তার সিঁদুরের লালে।


আমাদের বিয়ের আসরে পুরোহিতের মন্ত্রের সাথে
প্রদীপ, পুষ্প, পল­ব সকলই ছিলো, এমনকি
গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধার সুবাস ছিলো বাসর ঘরে;
শুধু ছিলো না তোমাদের ব্রাম্মন কূলের আশীর্বাদ।
তাতেও বড় বেশি অসুবিধে ছিলো না
যদি না থাকত তোমাদের হিংস্র প্রতিহিংসা।

কেন এমন করলে তোমরা, মা?
কেন অন্ধ বিদ্বেষে নিজের সন্তান ঢুকালে কারাগারে?
জানো মা, বন্দিনী বলে আজ কষ্ট পাইনা এতটুকু;
আমি শুধু কষ্ট পাই বাবার কথা ভেবে-
যিনি শিক্ষাদাতা, দীক্ষাদাতা এবং ধর্ম যাজক,
আমার অন্তরে যিনি, আদর্শ ব্যক্তিত্ব, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব
কেমন করে তিনি বিদ্বেষের ঝড়ে অথবা ক্রোধের অনলে
নিজ হাতে পোড়ালেন আদর্শ গীতিকা এবং নিজেকে!

আর ক’দিনই বা এখানে থাকব, মা!
কোনো পাপ তো করিনি কিংবা অন্যায়;
বের হবার পরই না-হয় দেখবে আমায়
দেখো গিয়ে আপনার ঘরে, আপন সংসারে আমায়! 

[ উৎসর্গ: সর্বাণী ভট্টাচার্য ] 


সাহিত্য >> কবিতা