Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > কবিতা > স্বপ্নের মোহনা

স্বপ্নের মোহনা


অসীম তরফদার

কেমন করে প্রেম এলো এই বুকে
কি করে সে স্পষ্ট হলো ঝলমলে দিবালোকের মতো!
হৃদয়ের সুরক্ষিত গোপন কুঠোরীতে কিভাবে সে ঢুকে গেল
দক্ষ তস্করের মত নিঃশব্দে, অলক্ষে!
সময়ের হিসেবে দশ দিন কি খুব বেশি দীর্ঘ?
হয়ত নয়; কিন্ত এই অল্প ক’দিন আগে আর পরের
অনুভূতি, উপলব্ধি ও অনুভবের যে তফাৎ -
সে তো কম নয়!
হয়ত জীবনটা এমনই-
একেকটি বাঁকে এর সংজ্ঞার্থ বদলে যায়
বদলে যায় লাইফ স্টাইল, মতাদর্শ, দর্শন
বেঁচে থাকার মানে কিংবা দিনযাপনের সমীকরণ;
একেকটা ধাপে এসে ঝুলিতে জমা হয়
বিচিত্র অভিজ্ঞতা, ঘটনা-দুর্ঘটনার ইতিহাস,
প্রাপ্তির আনন্দ অথবা না-পাওয়ার যন্ত্রণা।
অনেক কাক্সিক্ষত জিনিস হারিয়ে যায় জীবন থেকে
নির্দয় ভাবে ঝরে যায় অজস্র আশার ফুল
আর বুকের গভীরে লালিত স্বপ্নেরা

একটু একটু করে মরে যায় নি:শব্দে, মাথা খুঁড়ে;
তবু কি শূন্য হয় জীবন!
থেমে থাকে জীবনের চাকা অথবা স্বপ্ন বোনা?
নতুন অতিথি এসে ভীড় করে জীবনের জলসায়
বুকের জানালায় উঁকি দেয় নতুন স্বপ্নেরা
হৃদয়ের নিকানো উঠোন ভরে ওঠে নতুন আশার আলোয়;
এভাবেই জীবনে যোগ হয় নতুন মাত্রা
বদলে যায় গতি, বদলে যায় ছন্দ প্যাটার্ন।
মাত্র দশ দিনের পারিবারিক সফরে সিঙ্গাপুর,
চারদিকে উন্নত জীবনের কত আয়োজন
দৃষ্টি ফেরালেই কত নয়নাভিরাম দৃশ্য,
অথচ একজন মানুষের অনুপস্থিতির দু:সহ অনুভব
প্রতি মূহুূর্তে উতলা করল আমায়, শ্যামের বাঁশির মতো।
এই অল্প ক’টি দিনের না-দেখার কষ্ট থেকে বুঝলাম
জিতু আমার জীবনে কতখানি, কতটা অপরিহার্য!
অথচ মাত্র ক’দিন আগেও যাকে শুধুই বন্ধু ভেবেছি
তার বেশি কিছু ভাবিনি কখনও;
হয়ত জিতুও ভাবেনি, কিংবা ভাবছে না এখনও।
আর যেন কিছুই ভালো লাগে না, যেন কাটে না প্রহর আর
শুধু অপেক্ষা - কখন ফিরব দেশে, কখন দেখা হবে?
কখন তাকে বলব- জিতু আমি তোকে...
কিন্তু কি করে বলব? কি ভাববে জিতু?
সে কি এমন করেই ভাবছে আমাকে?
সমস্ত কিছুর মাঝে থেকেও সে কি আমারই মতন
নিঃস্ব রিক্ত নিঃসঙ্গ ভাবছে নিজেকে?
যেদিন ফিরলাম সেদিনই দেখা হল জিতুর সাথে,
শহর থেকে দূরে, মেঠো পথের ধারে এক জনহীন কোনে
শর্ষে ক্ষেতের আলের উপর বসে
আমাকে অবাক করে দিয়ে জিতু বলল-
‘‘শম্পা, আমি তোকে ভালোবাসি।
গত ক’দিনে তোর শূন্যতা আমাকে কেবলই দগ্ধ করেছে
ভেতরে ভেতরে আমি অঙ্গার হয়ে গেছি;
তোর শূন্যতা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে
এ জীবনে তোকেই আমার সবচে’ বেশি প্রয়োজন’’।

খরতাপে চৌচির মৃওিকায় অভাবনীয় বর্ষণ দেখে
যে আনন্দ খেলা করে কৃষকের চোখে
তেমনই আনন্দের ঢেউ দোলা দিয়ে গেল এই বুকের জমিনে!
কত কঠিন কথাটি জিতু বলে দিল কতটা সহজে,
আমারও অনেক বলার ছিল, বলা হল না,
লজ্জাবতীর মত নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়লাম ওর প্রশস্থ কাঁধে;
এক মোহমুগ্ধ আবেশে আমার আঁখি মুদ্রিত অথবা
তন্দ্রাচ্ছন্ন,
আমাকে ঘিরে অনুভুত হল এক হাতের বেষ্টনী
আর মাথার উপর অন্য হাতের মমতার পরশ,
এ এক অন্যরকম অনুভুতি, এক নন্দিত স্বপ্নের মোহনা!


সাহিত্য >> কবিতা