কাজের ব্যস্ততায় ডুবে থেকে থেকে
আজ আমি বড় ক্লান্ত।
তাই কোন কাজ নয় আজ; ছুটি নিয়েছি
অফিস, সংসার এমনকি পরিচিত গণ্ডি থেকেও।
বেড়িয়ে পড়লাম ঘর ছেড়ে,
কিছুটা সময় এখানে সেখানে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা
তারপর চলে এলাম ধানমন্ডি লেকের ধারে,
পাশেই একটা কারুপণ্য প্রদর্শনী, ঢুকে গেলাম কিছু না ভেবেই।
নক্শী করা শান্তিনিকেতনী ব্যাগ চোখে পড়ল,
কাছে গিয়ে ধরতে গেলাম ব্যাগটি
ঠিক সেই মূহূর্তেই অন্য একটি হাত এসে ধরে ফেলে সেটি
আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল হঠাৎ
মনে হল, এ হাতখানি যেন আমার অনেক দিনের চেনা।
তখনও ঘোর কাটেনি আমার, অপলক তাকিয়ে আছি
সেই হাতের দিকে ।
ঘোর কাটল এক সুরেলা কন্ঠের মধুর ঝংকারে-
“আরে আপনি! কেমন আছেন? কতদিন পর দেখা?”
মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি দীপান্বিতা!
কোন কিছু বলার সুযোগ দিল না, সঙ্গে করে নিয়ে গেল ডিঙিতে।
দুপুরের প্রখর রোদ, ঝিরিঝিরি বাতাস, লেকের জলে মৃদু কম্পন
আর ডিঙিতে পাশাপাশি বসেছি আমরা দু’জন।
আজ এগার বছর পর দেখা-
কতটা বদলে গেছে দীপান্বিতা এখন
সেদিনের চাপা স্বভাবের মেয়েটি আজ বড় সাবলীল।
“আপনার বৌ নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী?
ভীষণ ভালোবাসে বুঝি আপনাকে?
কোন মেয়ে কি আপনাকে ভালো না বেসে পারে!
আপনার রূপের আর গুণের প্রশংসায় সব সময় ব্যস্ত থাকত
আমার চেনা জানা মেয়েরা
আর আমি হিংসায় ভেতরে ভেতরে পুড়ে মরতাম-
কেন সবাই এমন করে শুধু নজর দেয়
আমার পছন্দের মানুষটির দিকে!
কি ছেলে মানুষি ভাবনা! ”
শব্দ করে হেসে ওঠে দীপান্বিতা -
“মনে হলে ভীষণ লজ্জা হয় এখন
তবে আপনি যে কেমন মুডি ছিলেন না -
ভালোলাগার কথা বলাতো দূরের কথা বোঝাতেও সাহস করিনি।
কেবলই মনে মনে স্বপ্ন এঁকে গেছি
আর মন্দিরে দেবতার সামনে বসে
আপনার জন্য প্রার্থনা করেছি দিনের পর দিন,
সদয় হলেন না ঈশ্বর! পোড়া কপাল আমার!”
দীপান্বিতা তখন বর্তমানে নেই, চলে গেছে অন্য জগতে
কয়েকটি মূহুর্তের জন্য আমিও ভুলে গেছি, কারও স্বামী আমি
কিংবা দীপান্বিতা অন্য এক পুরুষের স্ত্রী,
হাতের মুঠোয় তুলে নিয়েছি দীপান্বিতার হাত।
শুধু একটি বারের জন্য সাহসী হতে পারলে না, দীপান্বিতা?
শুধু একবার বোঝাতে পারলে না কোন ইশারায়
অথবা আমার চোখ দেখে বুঝতে পারলে না
যে কথাটি আমি বলতে পারিনি হাজার বার চেষ্টা করেও?
ব্যক্তিত্বের খোলস ভেঙ্গে প্রকাশ করতে পারিনি
আমি যে তোমায় ভালোবাসি দীপান্বিতা!
“সত্যি নির্দয় নন বিধাতা, তিনি শুনেছেন আমার প্রার্থনা-
পাইনি হয়ত পার্থিব জগতে তোমায়
তবু বুকের মধ্যে লালন করছি যে তোমাকে
সেই তোমার বুকের মাঝেও আমার জন্য অবারিত ভালোবাসা-
এটাই আমার পরম প্রাপ্তি, এতেই আমার সুখ।
এই যে ভালোবেসে আজ তুমি হাতটি ধরেছো আমার
এই ছোঁয়াটুকু থেকে যাবে সারাজীবন।”
দীপান্বিতার চোখ থেকে ঝরে পড়ে মুক্তোদানা
আমার মুখেও কিছু আসে না বলার মত,
এক ঝাঁক কাল মেঘ যেন ছেয়ে দিল আকাশ
ঢেকে দিল মধ্যাহ্নের উজ্জ্বল সূর্যকিরণ।