গ্রামেগঞ্জে, হাটে-মেলায় ও শহরের মোড়ে মোড়ে সরবত কিংবা রস বা জুস বিক্রির দোকানে আনারসের রস বিক্রি হয় । এর ভেষজ গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবে না । আনারসের কিছু দারুন জানা-অজানা তথ্য ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হল-
রাসায়নিক উপাদান
আনারসে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সহ শর্করা, লিপিড দ্রব্য, প্রোটিন, খনিজ লবণ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিড, গ্লাইকোসাইড, মনোস্যাকারাইড, সরল প্রোটিন সহ ভিটামিন ভিটামিন-সি থাকে । এছাড়া খনিজ উপাদান রূপে প্রচুর ক্যালসিয়াম ফসফরাস, আয়রন, কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উৎসেচক এবং ব্রোমালিন জাতীয় উপাদান থাকে ।
ব্যবহার
গরমের সর্দি : বর্ষাকালে গরমের সময় সব মানুষেরই সর্দি হয় । অনেক সময় এর সঙ্গে পেট খারাপ, মাথাধরা, জ্বর জ্বর ভাব দেখা যায় । কফ, কাশিও হাজির হয় । এক্ষেত্রে পাকা আনারসের রস সাত-আট চামচ সামান্য চিনি মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে ভালো হয় কিংবা দিনের যে কোনো সময় খেলে দ্রুত উপশম হয় । প্রয়োজনে দিনে দু ‘ বারও খাওয়া যেতে পারে ।
কৃমি : পরিণত আনারস পাতার রস দু ‘-চামচ পরিমাণে নিয়ে জলের সঙ্গে মিশিয়ে সরবত করে তিন-চারদিন সকালে খালি পেটে খেলে বিশেষত বাচ্চাদের কুচো কৃমি সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যায় । এই কৃমির কারণে বদ হজম ও অন্যান্য উপসর্গগুলোও দূর হয়।
মূত্রঘটিত রোগ : প্রবীণদের মুত্রঘটিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সে বছরের যে কোনো সময়ে হোকনা কেন আনারস গাছের পরিপুষ্ট মূল এক গাছা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে থেতোকরে রস বের করতে হয় । পরে এক চা-চামচ পরিমাণ রসের সঙ্গে সামান্য জল মিশিয়ে দিনে একবার করে দু’-চারদিন নিয়মিত ভাবে খেলে কয়েক দিনের মধ্যে মূত্রঘটিত সব সমস্যা দূর হয় ।
কফ-কাশি : ঠান্ডা লেগে গেলে কিংবা সর্দির কারণে কাশি হলে, গলা ব্যথা দেখা দিলে কিংবা এর সঙ্গে বুক ব্যথা হলে ও কথা বলতে কষ্ট হলে পাকা আনারসের রস খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেয় । এক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন সকালে কিংবা বিকেলে আট-দশ চামচ পাকা আনারসের রস সামান্য চিনি মিশিয়ে সরবত করে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায় । কয়েক দিনের মধ্যে কাশি দূর হয় ও অন্যান্য উপসর্গগুলো আর থাকে না ।
অপুষ্টিজনিত রোগ : সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে অপুষ্টির ভালো ওষুধ পাকা আনারসের রস । পাকা আনারসের রস ছোট এক গ্লাস পরিমাণে বা দেড়শো গ্রাম থেকে একশো গ্রাম দিনের যে কোনো সময়ে কিংবা প্রাতঃকালে খেলে কয়েক দিনের মধ্যে দেহের পরিবর্তন চোখে পড়ে । দেহের পুষ্টি ও শরীর স্বাস্থ্য পরিবর্তিত হবে । সারা দিনের কাজ সম্পাদনে মনে ও দেহে নতুনভাবে শক্তি অর্জিত হবে ।
পেট ফাপা : পাকা আনারসের রস সামান্য নুন ও গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে সরবত করে খেলে কিছুক্ষণের মধ্যে পেট ফাপা ভাবটা দুর হয়ে যায় ।
ত্বকের রোগ : গ্রীষ্মের পর বর্ষার শুরুতে প্রায়ই অনেকেরই ত্বকে কোনো না কোনো রোগ দেখা দেয় । চুলকানি, খসখসে ভাব, কালচে বর্ণ ধারণ প্রভৃতি হলে পাকা আনারসের রস এক কাপ পরিমাণে কয়েকদিন নিয়মিতভাবে খেলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায় ভালো ফল ।
অরুচি : পাকা ফল না পাওয়া গেলে পরিণত পাতার রস দু’-তিন চামচ পরিমাণে নিয়ে সামান্য লবণ মিশিয়ে তিনদিন খেলে কিংবা পাকা ফল পাওয়া গেলে এক কাপ পরিমাণ আনারসের ফলের রস নিয়মিতভাবে তিন দিন খেলে অরুচি রোগ দূর হয় । পরে সব রকম খাদ্য খেতে ভালো লাগে ও সহজে হজম হয় ।
ফুসফুস ও যকৃতের রোগ : যকৃতের কারণে দেহে নানা রোগের সৃষ্টি হয় । এই রোগগুলো দূর করতে সিজন ফল হিসেবে আনারসের ব্যবহারে খুবই ভালো ফল পাওয়া যায় । এর সঙ্গে ফুসফুসের রোগগুলোতেও আনারসের পাকা ফলের রস বিশেষভাবে কাজ করে । মাত্র অন্তত দিন তিনেক এই রস নিয়মিতভাবে খেলে দ্রুত ফল পাওয়া যায় । এক কাপ আনারস ফলের রসের সঙ্গে পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে সরবত করে খেতে হয় ।
পেটের ব্যথা : পাকা আনারস রসের সঙ্গে সামান্য সাদা জিরে গুঁড়ো ও লবণ মিশিয়ে দিনে দু ‘ বার নিয়মে খেলে দ্রুত পেটের ব্যথা সেরে যায় ।
কোষ্ঠকাঠিন্য : ভরা পেটে পাকা আনারস টুকরো টুকরো করে কেটে মরিচ গুঁড়ো ও নুন ছিটিয়ে চার-পাঁচদিন খেলে সব অসুবিধে দূর হয় ।
ডিপথেরিয়া : গাছ পাকা আনারস থেকে রস সংগ্রহ করে এক কাপ পরিমাণে দিনে দু’বার নিয়মে পাঁচদিন খেলে রোগের প্রকোপ কমে ও রোগ নিরাময় হয় ।
বিশেষ পরামর্শ
আনারস গাছ ও এই গাছের ফল খুব একটা দুষ্প্রাপ্য নয় । সিজনে বাজারে তো আমদানি হয়ই । বিশেষত বর্ষাকালে বা গ্রীষ্মের পর এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু লাগে তেমনি এর গুণাগুণ দেহে প্রভূত উপকার সাধন করে ।