Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > কবিতা > ক্ষেত মজুরের কাব্য

ক্ষেত মজুরের কাব্য


নির্মলেন্দু গুণ

মুগুর উঠছে মুগুর নামছে 
ভাঙছে মাটির ঢেলা,
আকাশে মেঘের সাথে সূর্যের
জমেছে মধুর খেলা। 

ভাঙতে ভাঙতে বিজন মাঠের
কুয়াশা গিয়েছে কেটে,
কখন শুকনো মাটির তৃষ্ণা
শিশির খেয়েছে চেটে। 

অতটা খেয়াল রাখেনি কৃষক
মগ্ন ছিল সে কাজে,
হটাৎ পুলক পবনে হৃদয়
পুষ্পিত হলো লাজে। 

ফিরিয়া দেখিল বঁধূটি তাহার
পিছনে আলের 'পরে
বসে আছে যেন, ফুটে আছে ফুল
গোপনে চুপটি করে। 

সামনে মাটির লাল সানকিটি
জরির আঁচলে বাঁধা,
আজ নিশ্চয় মরিচে রসুনে
বেগুন হয়েছে রাঁধা। 

হাসিয়া কৃষক মরাল বাঁশের
মুগুর ফেলিয়া দিয়া
কামুক আঁখির নিবিড় বাঁধনে
বাঁধিল বধূর হিয়া। 

বরুন গাছের তরুণ ছায়ায়
দু'জনে সারিল ভোজ,
বধূর ভিতরে কৃষক তখন
পাইল মনের খোঁজ। 

মেঘ দিল ছায়া, বনসঙ্গমে
পুরিল বধূর আশা-;
মনে যাই থাক, মুখে সে বলিল :
‘মরগে বর্গা চাষা।'

শব্দটি তার বক্ষে বিঁধিল
ঠিক বর্ষার মতো।
'এই জমিটুকু আমার হইলে
কার কিবা ক্ষতি হতো?' 

কাতর কণ্ঠে বধূটি শুধালো :
'আইছ্যা ফুলির বাপ,
আমাগো একটু জমিন অবে না ?
জমিন চাওয়া কি পাপ?' 

'খোদার জমিন ধনীর দখলে
গেছে আইনের জোরে,
আমাগো জমিন অইব যেদিন
আইনের চাকা ঘোরে। 

অসহায় বধূ জানে না নিয়ম
কানুন কাহারে বলে-;
স্বামীর কথায় চোখ দু'টি তার
সূর্যের মতো জ্বলে। 

'বলদে ঘোড়ায় গাড়ির চাক্কা,
নারীর চাক্কা স্বামী-;
আইনের চাকা আমারে দেখাও
সে-চাকা ঘুরামু আমি।'

কৃষক তখন রুদ্র বধূর
জড়ায় চরণ দু'টি,
পা-তো নয় যেন অন্ধের হাতে
লঙরখানার রুটি ! 

যতটা আঘাত সয়ে মৃত্তিকা 
উর্বরা হয় ঘায়ে
ততোটা আঘাত সইল না তার
বধূর কোমল পায়ে। 

পা দু'টি সরিয়ে বধূটি কহিল :
'কর কি? কর কি? ছাড়ো,
মানুষে দেখলি জমি তো দেবি না,
দুন্যাম দেবি আরও।' 

পরম সোহাগে কৃষক তখন
বধূর অধর চুমি !
হাসিয়া কহিল : 'ভূমিহীন কই ?
আমার জমিন তুমি।'

আকাশে তখনও সূর্যের সাথে 
মেঘেরা করিছে খেলা,
মুগুর উঠছে মুগুর নামছে 
ভাঙছে মাটির ঢেলা।


সাহিত্য >> কবিতা