ঝুলবারান্দায় সকালের সোনালি রোদ্দুর
হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের পেয়ালা;
ও বাড়ির ছাদের কার্ণিশে একজোড়া শালিক
কেউ কড়া নাড়ে দরজায়।
ঝুলবারান্দায় সকালের সোনালি রোদ্দুর
বেতের মোড়ায় মুখোমুখি দুজন
মাঝখানে ধোঁয়া ওঠা দু’পেয়ালা চা,
ও বাড়ির ছাদের কার্ণিশে একজোড়া শালিক
মহুয়ার দু’চোখ ভরা জল !
মহুয়া, তুমি কাঁদতে পারো বলে
সহজেই হয়তো হালকা হতে পারো
বিরহ-চিতার আগুন সহজেই পারো নেভাতে
পারো কষ্টের পায়রাগুলো বুকের ঘর থেকে
উড়িয়ে দিতে-দূরের নীলিমায়।
আমি কাঁদতে পারি না বলে
জমে থাকা কষ্টগুলো পারি না কাউকে দেখাতে;
বেদনার লেলিহান আগুন পারি না নেভাতে
কেবলই নীরবে নিঃশব্দে পুড়ে হই ছাই।
মহুয়া আলতো করে চোখ মুছে বলে-
“চোখের জলে হয়তো কিছুটা হালকা হয় যন্ত্রণা
কিছুটা মিলিয়ে যায় ক্ষতের চিহ্ন
কিন্তু স্মৃতিগুলো তো ভেসে যায় না কান্নার স্রোতে !
চোখের জলে হয়তো কিছুটা হালকা হয়
কষ্টের ছাপ, বেদনার দাগ
যায় কি কখনো মুছে
হৃদয়ের ক্যানভাসে আঁকা স্বপ্নের ছবি !
তুমি এমন নিষ্ঠুর কেনো হলে” ?
আমি শান্ত ভাবে বলি-
আমি তো তোমায় কোনো আঘাত করিনি !
বরং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগটুকু না দিয়ে
বোশেখের হঠাৎ ঝড়ের মতন নিমেষে
হৃদয়ের সমস্ত সম্পর্ক নিশ্চিহ্ন করে চলে গেলে-
আমি বিধ্বস্ত ডানা-ভাঙা পাখির মতো
অসহায় ভাবে দেখলাম শুধু।
মহুয়া উঠে গ্রীল ধরে দাঁড়ায়, অভিমানী সুরে বলে-
“তোমার প্রতিবাদহীন নীরবতাই হয়তো কষ্ট দিয়েছে বেশি !
আমি না হয় ভুল করেছি
তুমি কেনো খুব করে বকে দিলে না
কেনো নিলে না বুকে টেনে !”
তাহলে হয়তো সারা জীবন অজানাই থেকে যেতো
কেউ আমায় এতটা ভালোবাসে আর
তুমি বিহীন একেকটি দিন কতটা যন্ত্রণাময়।
পরম সোহাগে মহুয়া আমার বাহুতে ঢলে পড়ে
আদর মাখা মিষ্টি সুরে বলে-
“সত্যি ভীষণ নিষ্ঠুর তুমি”।
ও বাড়ির ছাদের কার্ণিশে তখনও একজোড়া শালিক
ঝুলবারান্দায় সকালের সোনালি রোদ্দুর
এক কোণে শূন্য দুটি চায়ের পেয়ালা
ভালোবাসার স্বপ্নে বিভোর দুই জোড়া চোখ।