শ্রাবণের বৃষ্টিতে ভিজে যায় প্রসন্ন বিকেল
ভিজে যায় বৃক্ষের বুক, অপরাজেয় বাংলার
তিন মূর্তিমান প্রতীক, কলাভবনের শরীর।
তখন করিডোরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে...
- তোমার কি কি পছন্দ?
: নীলিমার নীল, বিশুদ্ধ জ্যোৎস্না, স্মৃতির গাংচিল, দূরের শ্মশান
- ধ্যাৎ, এগুলো তো কবিতার শব্দাবলী
: তাহলে... তোমার মা এখন কেমন আছেন?
- পছন্দের কথা বলো?
: পছন্দের কথা?... কবিতা।
- জীবন তো কবিতা নয়?
: কিন্তু কবিতায় তো জীবন থাকে।
- ভিতরের কথা থাক না ভিতরে
: কিভাবে তবে বেঁচে থাকা নৈঃশব্দের নীরব মঞ্চে?
- কেন একা একা জেগে থাকো, কেন একা পথ খোঁজ নিত্য,
ভরা পূর্ণিমার রাতে?
: জানি না... এখনও কেন কার কবিতায় ভিজে হৃদয়,
কোন হরিণি নেচে যায় ছন্দে।
- দোহাই। এইবার শেষ কর কবিতার গল্প
: না, পারো কবিতায় বন্দি করে রাখো।
- তাহলে ভিতরে জন্মাবে কষ্টের পরগাছা, বরং
খুলে দাও উত্তরের জানালা। দ্যাখো-দূরের আকাশ, কাশফুল, চন্দন কাঠ।
: কাব্য নয় আর, ভালোবাসা মরে যায় নিদ্রাহীন ঘরের ভিতরে,
পেতে চায় উড্ডীণ জীবনের লবণাক্ত জল।
- তবে এই নাও সবুজ গলাপ, এই ধরো হাত,
চলো জল শুকিয়ে নদীর বুকে খুলেছে পথ।
: বসন্ত ঝরে যাক প্রাঙ্গণে, তবু তোমাতে ফিরবো না আর।
- দেখ দেখ ঐ যে ফেলে আসা নদী, ভাঙ্গা সেই ঘাট,
প্রাণের চিলেকোঠা পোহাচ্ছে রোদ্দুর।
: আমিও তো চাই ঘাস ফড়িংয়ের সোনালী পাখা, কিন্তু
সব যেন তছনছ হয়ে যায় র্দীঘ বাতাসের শ্বাসে।
- জল যেমন ভাঙ্গে ঢেউ, কিংবা জল পোকারা ভাঙ্গে জল-
তেমনি হৃদয়ের পাড় ভেঙ্গে ভেঙ্গে কতদূর পার হয়েছ?
: বিশ্বাস করো, অলিন্দে ফোটে না কাঁঠালচাপা আগের মতো
অন্ধকারে উঠে না নড়ে বুড়িগঙ্গা সেতু।
- আর কতগুলি মেহগনি হাওয়া, মেহেদীর রাত তোমার চাই
: কখনও চাই না রাত, কেবল তোমাকেই চাই, তোমাকে, তোমাকে।
জলের শরীরে যেমন বেঁচে থাকে মাছ কিংবা শামুক, তেমনি
তোমার শ্রাবণের জলে, আমাকে দাও একটু ঠাঁই।
- তাই বলি- যদি ফের ভালোবাস, যদি ভুল করে
আবার কখনও ফোটাতে চাও গোলাপ, বেদনার বর্ণমালা
শিখে নিও আগে, বৃক্ষের ছায়ায় নির্বাসিত করো মন।
বৃষ্টি থেমে যায়, সংলাপও... কিন্তু থামে না জীবন।
কেবল বৃষ্টি শেষে দুঃখের বৃক্ষ থেকে ঝরে যন্ত্রণার জল,
আর দূরে উড়ে শঙ্খচিল।