Choose your product from the mega showcase from thousands of sellers
BD Trade Blogs
> Blogs > বেড়ানো > ঘুরে আসুন নীলগিরি বান্দরবন থেকে

ঘুরে আসুন নীলগিরি বান্দরবন থেকে


সারাহ জেবীন

প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় জায়গা মেঘের রাজ্য নীলগিরি। প্রকৃতি তার সবটুকু সৌন্দর্য সাজিয়ে দিয়েছে পর্যটকদের জন্য। পাহাড়ের চুড়া থেকে মেঘের কাছাকাছি গিয়ে মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসুন মেঘের এই রাজ্যে। 

নীলগিরি বাংলাদেশের বান্দরবন জেলায় অবস্থিত একটি উঁচু পাহাড় এবং পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবন জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০ ফুট উঁচু পাহাড়টিই হচ্ছে বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি পাহাড়। ব্যস্ত জীবনে স্বস্তি আনতে পাশাপাশি পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে পর্যটকদের কাছে নীলগিরি হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং পছন্দনীয় জায়গা। সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরিতে এক অসাধারণ সৌন্দর্য যে কাওকেই করবে বিমোহিত। সারিসারি মেঘের পাশাপাশি খুব দূরে তাকালেই চোখে পড়বে সাঙ্গু নদী ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কেওক্রাডং, বগালেক, চট্রগ্রাম বন্দর । পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া অবধি সবুজের চাদরে মোড়া এবং মেঘের আনাগোনা। উঁচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ পদ্ধতিতে কমলালেবু, কলা, আনারস, জাম্বুরা, পেঁপে, জলপাই, আম, কাঁঠাল  ও পেয়ারার বন সাজিয়েছেন পাহাড়িরা। চাইলেই আদিবাসীদের খুব কাছে গিয়ে তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

কখন যাবেন

নীলগিরি সারাবছরই তার রুপ ছড়াতে থাকে। এই রোদ এই মেঘ এই বৃষ্টি এভাবেই প্রকৃতি রুপ বদলাতে থাকে নীলগিরিতে। সারাবছরই মেঘের আনাগোনা চলতে থাকে তবে বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও শীতে মেঘের মেলা বসে। এইজন্য শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বর্ষাকালে নীলগিরি সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। শরৎ এবং হেমন্তে নীল আকাশ ও মেঘের লুকোচুরি এবং শীতে কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকা চারপাশ, এ যেন প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ। তাই নীলগিরি যেকোন সময়ই যেতে পারবেন। তবে বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে পাহাড় ধসের ভয় থাকে। তাই এই সময়টায় পর্যটকদের সুবিধার জন্য রাস্তা বন্ধ থাকতে পারে।

নিরাপত্তা

নীলগিরিতে রয়েছে আর্মিদের ক্যাম্প তাই পরিবার নিয়ে ঘুরার জন্য অত্যন্ত নিরাপদ এই নীলগিরি। এই পর্যটনকেন্দ্রটি আর্মি বা সেনাবাহিনিদের দ্বারা পরিচালিত। পর্যটকদের জন্য আর্মিরা এখন আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন মেঘের রাজ্য নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রকে।


কিভাবে যাবেন

নীলগিরি যেতে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে প্রথমেই বান্দরবন যেতে হবে। ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে করে বান্দরবন যেতে পারেন। বাসে যেতে চাইলে যেকোন প্রান্ত থেকে হানিফ, এস.আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ডলফিন, শ্যামলি ইত্যাদি বাসগুলো বান্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসে করে গেলে বান্দরবন পৌঁছাতে ৭-১০ ঘন্টা লাগবে।

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবন যেতে কোন ট্রেন নেই। ঢাকা থেকে প্রথমে চট্রগ্রামগামী ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি ও সোনার বাংলা এইসব ট্রেন দিয়ে চট্রগ্রাম যেতে পারেন। 

চট্রগ্রাম নেমে বদ্দরহাট নামক স্থানে পূর্বানী ও পূবালী বাসে করে বান্দরবন যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভাড়া হবে ২০০-২২০ করে। এছাড়াও চট্রগ্রামের দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ার মধ্যেও বাসে করে সরাসরি যেতে পারেন বান্দরবন।

বান্দরবন থেকে নীলগিরি কিভাবে যাবেন

বান্দরবন থেকে নীলগিরি যেতে অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। জীপ, সিএনজি, লোকাল বাস অথবা চান্দের গাড়ি দিয়ে যেতে পারেন নীলগিরি। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে নিলে। এতে নীলগিরি যাওয়ার পথের অন্যান্য জায়গায়ও ঘুরে দেখতে পারবেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে জীপ নিয়ে নিতে পারেন। এইসব জীপ আপনি বান্দরবন জীপ স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী  ৩০০০-৬০০০ টাকা ভাড়ায় নিতে পারবেন। এছাড়াও চান্দের গাড়ি, সিএনজি, ছোট জীপ ইত্যাদি দিয়েও যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা না থাকলে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। তবে নীলগিরিতে মেঘের মেলায় হারিয়ে যেতে চাইলে খুব সকালে চলে যাবেন যেন ৫-৬ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারেন।

কম খরচে যেতে চাইলে আপনি লোকাল বাসে করেও যেতে পারেন, তবে এতে সময় অনেক বেশি লাগবে। থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে থানচির উদ্দেশ্যে বাস কিছুক্ষণ পর পরই ছাড়ে। 

নীলগিরিতে যাওয়ার নিয়মাবলী

নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। এটি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়। সাধারণত বিকেল ৫টার পর থেকে নীলগিরির পথে আর কোন গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয় না। 

কোথায় থাকবেন

বেশিরভাগ পর্যটকরাই বান্দরবন থেকে নীলগিরি ঘুরে দিনে দিনেই আবার বান্দরবন ফিরে আসেন। বান্দরবনে বেশকিছু আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। শহর ও তার আশেপাশেই এইসব রিসোর্ট এবং হোটেলগুলো রয়েছে। এছাড়াও যারা নীলগিরিতে থেকে মেঘের আনাগোনা উপভোগ করতে চান তাদের জন্য রয়েছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কটেজ। এ কটেজ সবার কাছেই খুবই আকর্ষনীয় তাই মাসখানিক আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। ছুটির দিনগুলোতে ভাড়া বেশি হয়ে থাকে। 

কোথায় খাবেন

নীলগিরি রিসোর্টে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে এইসব রেস্টুরেন্টেও খেতে পারেন তবে এক্ষেত্রে আগে থেকে খাবার অর্ডার করে রাখতে হবে।

এছাড়াও বান্দরবন ফিরে এসেও খেতে পারেন। বান্দরবনে বেশকিছু খাবারের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফে রয়েছে। 

অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান

স্বর্ণ মন্দির ভ্রমণ

নীলগিরি যাওয়ার পথে আরও অনেকগুলো আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। নীলগিরি যেতে শৈল প্রপাত ঝর্ণা, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণ মন্দির ও সাইরু হিল রিসোর্ট পার হয়ে যেতে হয়। রিজার্ভ গাড়ি না নিলে এইসব স্পটগুলো ঘুরে যেতে পারেন। খুব ভালো হয় যদি আগে সরাসরি নীলগিরি চলে যান। মেঘের কোলে ঘুরে আসার পথে অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। আর যদি বিকেলে নীলগিরিতে সময় কাটাতে চান তাহলে যাওয়ার পথেই সব আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে তারপর নীলগিরি যেতে পারেন।

প্রয়োজনীয় টিপস

  • ভ্রমণের সময় অবশ্যই সাথে করে জাতীয় পরিচয়পত্র রাখবেন।
  • চান্দের গাড়িতে উঠার সময় ছাঁদে উঠবেন না।
  • বান্দরবন থেকে নীলগিরি খুবই আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ভ্রমণ করার সময় সাবধান থাকুন।
  • শৈল প্রপাত ঝর্ণার পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল, নামার সময় সাবধানে থাকবেন।

ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য নীলগিরিতে। পরিবার, বন্ধু কিংবা পছন্দের মানুষের সাথে একান্ত সময়গুলো উপভোগ করুন প্রকৃতির বুকে।


জীবনযাপন >> বেড়ানো