টেলিফোনের তার বেয়ে
ওপার হতে ভেসে এলো তোমার কন্ঠস্বর;
আমার স্নায়ু, শিরায় চঞ্চল হরিণীর ছুটাছুটি,
হৃদয়ের নীপবনে ময়ূরীর উন্মাতাল নাচন;
যেন এরকম মূহুর্তের জন্য
উন্মুখ হয়ে আছি কতদিন.. কতযুগ.. কতটি বছর…
: সত্যি আমার কথা এখনও ভাবো তুমি?
: জীবিকার টানে আর
সমাজজীবনে একটুখানি সোজা হয়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয়
কিংবা উল্টো স্রোতে টালমাটাল লড়ে
বাঁচার মত বেঁচে থাকার আশায়
সতত কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকা আর
অথৈ জলে হাবুডুবু খাওয়া -
এর মাঝে কারও কথা ভাবার অবসরই হয় না,
এমনকি নিজেকে নিয়েও নয়;
এভাবে অহর্নিশ প্রতিকূল সময়ের সাথে লড়াই করে
এক সময় ভেতরে ভেতরে আমি মরে যাই,
ঠিক তখনই কোন না কোন ভাবে তুমি সামনে চলে আসো
আর জাগিয়ে দাও আমায়, আমার তখন পুনর্জন্ম হয়;
তখন আমি বুঝতে পারি -
আমারও একটা সোনালি অতীত আছে;
একদা আমার মনে প্রেম ছিল, আনন্দ ছিল
কষ্ট ছিল, স্বপ্ন ছিল এবং তুমি ছিলে।
: কেন তোমার এই নিরন্তর সময়ের স্রোতে
নুড়ি পাথরের মত ক্ষয়ে যাওয়া?
সে কি কেবলই অর্থ-বিত্ত আর প্রতিপত্তির নেশা?
: ঠিক নেশা নয়, তবে প্রয়োজন।
জন্মেছি বিত্তহীন বাবার সংসারে
আজন্ম ছিল তাঁর অর্থের অভাব আর আদর্শের স্বপ্ন;
দারিদ্র্যের সাথে আমৃত্যু লড়াই করে আমার চোখের সামনে
তিনি মারা যান বিনা-চিকিৎসায়, পথ্যবিহীন;
বুক ভরা ভালোবাসা, এমনকি
সকল যোগ্যতা সত্ত্বেও তোমাকে হারালাম
শুধু দারিদ্র্যে, বিত্তহীনতায়।
আর সে থেকেই জানলাম, (জানিনে কতটা সঠিক)
জীবনে আদর্শ অপেক্ষা বিত্তের প্রয়োজন বেশি,
বিত্তহীন আদর্শ নিয়ে মিথ্যে অহমিকা চলে
কিন্তু জীবন চলে না।
: কত বেশি সম্পদ হলে মানুষ বিত্তশালী হয়
অথবা নিজেকে সুখি মনে করে?
ঠিক আছে, তোমার নিজের কথাই বলো -
আর কতটা হলে থামবে তোমার
বিত্ত-বাসনায় এই চোখ-বাঁধা দৌড়?
সৃষ্টিশীল মানুষের সৃষ্টিহীনতায় বৈভবের স্বপ্ন দেখা?
: বৈভবের স্বপ্ন দেখি না কখনও।
সমাজে একটুখানি সম্মান নিয়ে চলা
কিংবা একটু ভালোভাবে বাঁচা, পেট পুরে খাওয়া,
আর এজন্য ন্যূনতম যতটুকু প্রয়োজন
ততটুকু পেতেই আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে,
প্রাচুর্যের স্বপ্ন দেখার অবকাশ কোথায়?
থাক, বাদ দাও ওসব কথা,
ছেড়েছি জীবনের হাল, যাক না যেদিকে খুশি;
এবার অন্য কথা বলো।
: প্রতিদিনের স্বাভাবিক ব্যস্ততায় বয়ে চলে নিরন্তর সময়,
কখনও প্রচন্ড খরতাপ, কখনও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
কখনও আবার বিরামহীন বর্ষণ;
বর্ষার উন্মাতাল প্রকৃতির মতই খেয়ালিপনায়
কেটে যায় আমার দিন-রাত।
তুমি বিত্তের পেছনে ছোটো দারিদ্র্য ঘোচাতে
আর আমি প্রাচুর্যের বৃত্তে-বন্দিনী
খুঁজি একটুখানি সুখ, মমতা খুঁজি
আর বিত্তহীন তোমার ভালোবাসা-
নিজের পায়ের ঘোলা করা জলে।
লক্ষীটি, তুমি আবার হাল ধর শক্ত করে,
আবার তুমি কলম নাও হাতে
দেখো, একদিন সৃষ্টির মাঝেই পাবে সুখ
ঘুচবে তোমার দারিদ্র্য, অর্জিত হবে খ্যাতি;
দেখবে সৃষ্টিতেই সুখ, বিত্তের চেয়ে;
লক্ষীটি, বলো, আবার তুমি লিখবে।
: তোমার ইচ্ছের কাছে বারবার আমি পরাজিত হই।
কিন্তু নৈসর্গের কাছে শব্দ ও ছন্দের প্রার্থনা করে
বড্ড নিরাশ হই আজকাল।
বিশ্বাস কর, ইদানিং আমি ধ্যানমগ্ন হয়ে লিখতে বসি
অথচ কাক্সিক্ষত শব্দেরা তবু অধরাই থেকে যায়,
বুঝি ব্যর্থ হই আমি।
তবু না হয় আবার চেষ্টা করব
বীজ বুনব অনুর্বর শুষ্ক জমিতে
আবার ফলাব ফসল বিরাণ মাঠে
তোমার জন্য, শুধু তোমার জন্য।