শীত এলেই এখানে নামে সমুদ্র পিয়াসী মানুষের ঢল।
সমুদ্র মন্থনে আমরাও এসেছি দল বেঁধে !
সাগরপারে দাঁড়িয়ে দেখছি সমুদ্র-জলে সূর্যের স্নান।
তেজদীপ্ত অগ্নিপিণ্ডটা সারাদিন আলো আর উত্তাপ ছড়িয়ে
ক্লান্তিতে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে ঝাঁপ দেয়
সাগরের শীতল জলে;
অতঃপর অন্ধকার গিলে ফেলে
জৌলুস ভরা পৃথিবীর উজ্জ্বল সব আয়োজন !
নতুন স্বপ্ন নিয়ে
নতুন উদ্দীপনা আর সম্ভাবনা নিয়ে
নতুন আলোয় হাসে পরের সকাল।
মিষ্টি সে রোদেলা সকালে করবীকে সাথে নিয়ে
নেমে যাই সাগর জলে-সমুদ্র স্নানে।
হাঁটু জলে নেমে করবীর হাত
আমার দু’হাতে নির্ভরতা খোঁজে;
কাঁধে মাথা রেখে শান্তভাবে বলে-
‘শুনেছি সাগরের কাছে এলে উদার হয় মন !
একটা প্রশ্নের অকপট উত্তর দেবে ?
সত্যি কি ভালোবাসো আমাকে’ ?
আমার মনেও প্রশ্নগুলো উঁকি দিয়েছে বারবার;
আঁধারে হাতড়ে ফিরি ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’ বলে
শূন্য হাতে ফিরে আসি বারবার-ভালোবাসা কই !
সাগর-তীরে দাঁড়িয়ে পারি না কপট হতে; করবীকে বলি-
দেখো, একদিন সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কপোলে টোল ফেলে করবী মিষ্টি করে হাসে;
আমরা ডুব সাঁতারে মেতে উঠি সমুদ্রের জলে।
করবী ক্লান্ত হয়ে এলে,
আমি গভীরে নেমে খেলা করি ঢেউয়ের সাথে।
আচম্বিতে খুব বড় ঢেউ এসে আমাকে ভাসিয়ে নেয়,
অসহায় আমি ঢেউয়ের ঘূর্ণিতে
তলিয়ে যেতে থাকি, তলিয়ে যেতে থাকি;
আমার রাত্রি-দিন, জীবন-মরণ
সব যেন নিকষ অন্ধকার;
আর সে অন্ধকারে শুধু ভেসে ওঠে খুব চেনা এক মুখ-
বাঁচার স্বপ্ন আর আকুতিতে ছটফট করতে করতে
হারিয়ে যেতে থাকে সেই মুখটিও।
সেই অন্ধকার থেকে হঠাৎ ভেসে উঠে
নতুন করে জীবনের স্পন্দন খুঁজি
বাঁচার স্বপ্ন খুঁজি, ভালোবাসা খুঁজি
আর ক্লান্তিতে চোখ ঝাপসা হয়ে এলে
আমার করবীকে খুঁজি-
প্রচণ্ড ভালোবাসায় উদ্বিগ্ন হয়ে।
আচমকা ভয়ে, উদ্বেগে, উৎকণ্ঠায়
ঝরে পড়ে করবীর বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা ;
ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বলে-
‘কি করেছো তুমি !
আর একটু হলে আমি তো মরেই যেতাম, জানো !’
হ্যাঁ, করবী-সব জানি।
একটু আগে যখন আমি জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি
চারিদিকে শুধু অন্ধকার,
সেই অন্ধকার ছিঁড়ে শুধু তোমার মুখটাই
আলোকচ্ছটার মতো বারবার দেখতে পেয়েছি
এবং বুঝেছি-তোমার মতো কেউ-ই ভালোবাসেনি আমাকে
আর কেউ বাসবেও না কোনোদিন;
আমিও বাসিনি ভালো অমন করে কাউকেই-
যেমনটি বেসেছি তোমাকে !