এই মেঠো পথ
এখানে শুরু হয়ে ঠিক কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে
কিংবা মিলেছে কোন্ধসঢ়; মহাসড়কে - সে আমি জানি না।
আমি শুধু এ পথের এই শুরু থেকে দূরের ঐ বাঁকটুকুই চিনি
এবং খুব ভাল ভাবে চিনি।
এ পথে একদা হোঁচট খেয়ে ভেঙ্গেছিল আমার পাঁজরের হাড়
মাঝে মাঝে আজও সে ব্যথা বেজে ওঠে টনটন করে
আমার বুকের ভেতর, নিভৃতে, অচৈতন্যে।
সেদিন এখান থেকেই আমরা কথা শুরু করেছিলাম।
নানা বৃক্ষসারির মাঝামাঝি বয়ে চলা
এপথ ধরে চলতে চলতে আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের
ভালোবাসার বন্ধন ছিঁড়ে নিজেদের মুক্ত করবার
এক কঠিন আপোষ করেছিলাম।
আমাদের অনেক দিনের গভীর সম্পর্কের
সুখময় কিংবা বিষাদময় স্মৃতি
পাওয়া কিংবা না-পাওয়ার আনন্দ-বেদনা এবং
কী হয়নি অথবা কী হতে পারত
এসবের অর্থহীন হিসেব কষে কষে এক সময়
নন্দিতার চোখে জল, আর নীল যন্ত্রণার বিষাক্ত বিষে
অসার হয়ে যায় আমার সর্বাঙ্গ।
তখন আমরা ঠিক এই বাঁকটাতে;
কিছুটা সময় দাঁড়িয়েছিলাম নিঃশব্দে,
তারপর শুরু উল্টো পথে হাঁটা।
যেখানে পথের শুরু সেখানে এসেই শেষ হল একসাথে পথচলা,
যদিও হাসিমুখেই পা বাড়ালাম দুজন দুপথে, কিন্তু
অলক্ষ্যে বয়ে নিয়ে গেলাম
অন্তহীন, সমবেদনাহীন নিঃশব্দ যন্ত্রণা; আর আমাদের
শেষ দেখা ও শেষকথার অমলিন স্মৃতির পাপড়ি
ছড়িয়ে গেলাম এই মেঠো পথে, মলিন ধূলিকণায়।
এর মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর
তবু এক অদেখা টানে নাগরিক জীবনের
সমস্ত ব্যস্ততা উপেক্ষা করে আমি বারবার ফিরে আসি
মফস্বলের এই মেঠোপথের কাছে।
এই পথের দিকে তাকিয়ে আমি শুধু ভাবি -
এই কাদামাটির শান্ত পথ
এই ধুলোমাখা আঁকাবাঁকা পথ
পথিকের পদচারণায় মুখরিত এই পথ
কেন পাষণ্ড জল্লাদের মত নির্দয় হাতে দুজনকে
নিক্ষেপ করল দুই মেরুর দূরত্বে! কেন
একপথের যাত্রীকে ভাগ করে দিল দুপথে!
কেন রক্তাক্ত করে দিল দুটি কোমল হৃদয়
নিদারুণ অবহেলায়, যারা স্বপ্ন দেখেছিল
এক সাথে চলবে একই পথে সারাটি জীবন;
এ পথ কোন উত্তর করে না।