ফ্যাশন নির্দিষ্ট কোন সময়ে আবদ্ধ থাকে না আর ট্রেন্ড একটা জোয়ারের মতোন। কয়েকমাস পরপর বদল হতে থাকে। কখনোও বা ট্রেন্ডিংএর স্থায়ীত্ব বেশী হয় এই যা। একটা মাঝারি ব্যাগ অথবা ল্যাপটপ ক্যারিং ব্যাগ ,কেডস, জিন্স, টপস বা কুর্তি সাথে সানগ্লাস এই হচ্ছে আমার সাজসজ্জা। যে কোন উৎসবে সরুপাড়ের একরঙা শাড়ি আর কপালে লাল টিপ পরতে আর চোখে কাজল পরতে অনেক মেয়েরাই পছন্দ করে। ফ্যাশন-ট্রেন্ডিং মানেই বৈচিত্যময়তা। ফ্যাশন মানে আদতেই কারো কাছে ব্যক্তিগত রুচিবোধের প্রকাশ আবার কারো কাছে নিজের সৌন্দর্যের প্রকাশ।
অনলাইন শপিং সুবিধাজনক হওয়ায় ফ্যাশনের প্রভাব এখন ঘরেঘরে। যা ফ্যাশন-ট্রেন্ডিংএ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইন্ডিয়ান-চাইনিজ-জাপানিজ-কোরিয়ান-ইরানী ফ্যাশন শুধু নিজ দেশের মধ্যেই আবদ্ধ নেই বরং তা আমাদের দেশীয় ফ্যাশন ট্রেন্ডিং এ বড় একটা জায়গা দখল করে আছে। অনেকে মেয়েরাই ইন্ডিয়ান থ্রি-পিস বা কুর্তি পরছে , মুসলিম নারীরা পরছে ইরানী ফ্যাশনের অনুকরণে পড়ছে হিজাব আর আবায়া কিংবা গাউন টাইপ ফ্রক। অফিস গোয়িং মেয়েরা ফ্যাশনে রয়েছে জিন্স-ফরমাল প্যান্ট-টপস –কুর্তি-স্রাগ আর স্কার্ফ। আবার দেশীয় হ্যান্ডলুম, মলমল কটনের সাদামাটা শাড়ির সাথে প্রিন্টেড ব্লাউজ বেশ আকর্ষনীয় ট্রেণ্ড। একই সাথে হ্যান্ডপেইণ্টেড, ডিজিটাল ফ্লোরাল প্রিণ্টেড মসলিন -টিস্যু শাড়ী, ভেজিটেবলটাই-ডাই কটন শাড়ি ট্রেণ্ডিং এ বেশ এগিয়ে।
এখনকার দেশী ফ্যাশন ট্রেন্ড কিন্তু ষাট দশককে মনে করিয়ে দেয় অনেকাংশেই। বিশেষত মেয়েদের পোশাকে ড্রেস কাটগুলো যেমন ফ্রিল দেয়া স্লিভ ,স্লিভলেস ,বেল বটোম পালাজ্জো বা ডিভাইডার, প্যান্টকাট শর্ট সালোয়ার, শর্ট কামিজ একেবারেই ষাটের দশকের ফ্যাশনের আদলে। মেয়েরা ড্রেসের সাথে মিলিয়ে কনভার্স নয়তো ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরছে। সামার ট্রেন্ডিং টিন-এইজ থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই ইনফরমাল ক্যাজুয়াল আউটফিট হিসাবে শর্টপ্যান্ট, টি-শার্ট, আর ফরমাল আউটলুকে ফরমাল-জিন্স-গ্যাবাডিন প্যান্ট, সেকেণ্ডারী কালারের রাউন্ড শেপ হাইনেক কলার বাটন শার্ট বেশ পরছে। নারীরা অনেকেই শাড়ির সাথে ম্যাচিং না করে ভিন্ন রঙের টপস ব্যবহার করছেন ব্লাউজের পরিবর্তে যা খুবই ফ্যাশনেবল।
ইদানিং এক্সেসরিজের ক্ষেত্রে রুপার এবং এণ্টিক গোল্ড প্লেটেড গহনা বেশ জনপ্রিয় ট্রেণ্ড। ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রঙের জয়পুরী কুন্দন –পাথরের গহনা পছন্দের শীর্ষেই বলা যায়। বেশ কিছু দিন যাবত কপালের টিপের ডিজাইনেও নতুন ট্রেণ্ড শুরু হয়েছে। টিপের বেইজ কালারের উপর এন্টিক-সিল্ভার মেটালের নকশা করা কাজ দেখা যাচ্ছে।
হলিউড –বলিউড-মালায়লাম-টালিউড-ঢালিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীর অনুকরণে নারীরা অনেকেই হুবহু নিজেদের ড্রেস তৈরি করছেন কিংবা হেয়ার স্টাইল ফলো করছেন। বিশেষ করে মেয়েদের হেয়ারস্টাইলে এখন ট্রেণ্ড হলো রিবন্ডিং এবং হেয়ার কালার। এমন কি হিন্দী টেলিভিশন সিরিয়ালের ড্রেস হুবহু কপি করছে শহর কিংবা মফস্বলের টিনএইজ মেয়েরা। তবে দেশীয় ব্র্যাণ্ডগুলো দেশীয় মোটিফের সাথে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য ফিউশনে পোশাক তৈরি করছে যা ট্রেণ্ডি পোশাক হিসেবে এখন অনেক জনপ্রিয়।
ইদানিং ট্রেন্ডিং এ নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে তা হলো পোশাকের রঙে। দেখা যাচ্ছে দিবস অনুযায়ী রঙ অনেক মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। একুশে ফেব্রুয়ারি সাদা-কালো, বিজয় দিবসে সবুজ-লাল,পহেলা বৈশাখে সাদা-লাল রঙ বসন্তে হলুদ-লাল, ভালোবাসা দিবসে লাল-নীলরঙের পোশাকের আধিক্য অনেক বেশী।
ফ্যাশন ট্রেণ্ডিং এ এখন আর ভৌগলিক বলয়ের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। দেশ-কাল-পাত্র ছাপিয়ে হয়ে উঠেছে ফ্যাশন-ট্রেন্ডিং। হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক ।