বসে আছি সুদীপার প্রতীক্ষায়।
টেলিফোনেও অফুরন্ত কথার স্রোত
দেখা হলে কত যে কথা
অন্তহীন দিন-অতন্দ্র রাত;
এই বেহিসেবী কথার প্রসঙ্গ এলেই সুদীপা বলে-
এই এক জীবন
শুধু কথা কথা আর কথা-
আর সে শুধু তোমার সাথে
যদি কথাগুলো পর্বত থেকে নেমে আসা জল হতো
তবে নদীর মতো কলকল বয়ে যেতো অবিরাম;
কথাগুলো দিয়ে যদি কাব্য করা যেতো-
হার মেনে যেতেন মহাকবি কালীদাস,
জীবনের হিসেব কষা হলে
এক জীবন, দুই জীবন, তিন জীবন...
এভাবে পুনর্জন্ম হতে হতে পৃথিবীর বয়স ফুরিয়ে যেতো।
সেই কবে একদিন ‘রং-নাম্বারে’ প্রথম পরিচয়,
তারপর দেখা-ঘনিষ্ঠতা...
সংজ্ঞাহীন সম্পর্কের সুতোয় খুব কাছাকাছি।
সুদীপা অবশ্য মাঝে মাঝে বলে-
এটাই হয়তো বন্ধুতা কিংবা তারও চেয়ে বেশি কিছু
চাঁদের মুগ্ধতায় বিমুগ্ধ হতে হতে চাঁদ হয়ে যাওয়া,
জোসনায় ভেসে ভেসে-ডুবে ডুবে
চাঁদ কাছে পাওয়া।
ভাবনার গহীন অরণ্য হতে বেরিয়ে এলাম ;
যখন ছন্দময় ভঙ্গিতে হেঁটে হেঁটে কাছে এলো সুদীপা,
অনির্বচনীয় মনোরম হাসিতে বসন্ত বিকেলের পুষ্প কানন
হয়ে উঠল অপার্থিব !
সুদীপা এমনিতেই রূপসী
আজ আরও বেশি অপরূপা
যেন জ্যোৎস্নাভেজা হাস্নাহেনা !
সামনের চুলগুলো বাতাসে উড়ছে
আর মাঝে মাঝে ঢেকে দিচ্ছে ওর জোসনা-কপাল;
যতবার দেখি ততবারই মনে হয়
ফ্ু্ ঁদিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দেই,
তবে দেইনি কখনো-পাছে অন্যকিছু ভাবে !
কিন্তু আজ তার স্নিগ্ধতা, বসন্তের পাগলা হাওয়া
ফুলের মাতাল গন্ধ কেড়ে নিল সংযম; বললাম-
অনেক দিনের সাধ, বাতাসে উড়ে আসা
কপালের ঐ চুলগুলো ফুঁ দিয়ে সরাবো একবার;
তুমি কিছু মনে করবে না তো ?
সুদীপা অবাক চোখে তাকায়
এলোমেলো হাওয়ায় চুলগুলো ওড়ে
মোহিনী হাসি মুক্তো ছড়ায়
স্বপ্ন-লাজুক চোখ ম্রিয়মান লজ্জায় আনত ;
সুদীপার কণ্ঠ যেন কেমন অচেনা-
‘আসলেই তুমি একটা পাগল’ !
আমি সাহসী হয়ে উঠি, খুব ঘনিষ্ঠ হই
আর উড়িয়ে দেই কপালে ছড়ানো রেশমী কুন্তল।
সুদীপার চোখে তন্দ্রা নেমে আসে
কম্পিত ঠোঁটে সর্বনাশের ছায়া
আমার ভেতর সংযমী আগুন জ্বলে ওঠে সর্বগ্রাসী।
আর তখনই হঠাৎ ঠোঁটে ঠোঁট রেখে
সুদীপা সে আগুনে জল ঢেলে দেয় ;
ধূলার ধরণীতে স্বর্গ নেমে আসে
সম্পর্কের গভীরে লুকানো সম্পর্কটুকু
সহসা বেরিয়ে আসে নতুন মাত্রায়, তারপর
মুগ্ধতা পাগলামী আর বন্ধুতার মিশেলে রচিত হয়
জীবনের নতুন স্বপ্ন
ভালোবাসার নতুন উপাখ্যান !