-আরে অনিন্দ্য না
এই রিকসা দাঁড়ান।
কি ব্যাপার, গেলো কোথায়!
ও কি আমাকে দ্যাখেনি
আমার দিকেই তো তাকালো
কি জানি হয়তো উদাস দৃষ্টি।
এ জনমে বুঝি দেখা হলো না আর।
চলেন ভাই।
-ঐন্দ্রিলা।
-এই যে ভাই দাঁড়ান।
অনিন্দ্য, আমি তো ভাবছি তুমি আমাকে দ্যাখোনি
রিকসাটা ছেড়ে দেই, কোথাও বসে কথা বলি।
-আচ্ছা, তোমার কি মনে নেই,
না দেখেও তোমার উপস্থিতি আমি ঠিকই বুঝতাম
আর আজ চোখের দেখা এভাবে কিভাবে ?
রিকসা ঘুরিয়ে জ্যাম ঠেলে তবেই তোমার কাছে এলাম।
মনে মনে ভীষণ ভয় পাচ্ছিলাম।
জানো, বুকের মধ্যে এখনো ধুক ধুক করছে।
-কেনো ?
-যেনো হাজার বছর ধরে তোমাকে খুঁজছি
অন্ধকারের প্রতিটি কণাকে দুহাতে ঠেলে আলোর সন্ধানে ফিরছি
সেই ফেরার পথে তুমি।
ভয় হলো যদি ঝড় ওঠে
আমাকে ছিটকে ফেলে দেয় দূর সীমানায়
আবারো যদি হাঁটতে হয় বছরের পর বছর যুগের পর যুগ।
-আমাকে সত্যিই মনে রেখেছো অনিন্দ্য
আমাকে ভাবো সত্যি ?
অথচ একদিন অবহেলা করেছিলে
কতদিন পরে আজ দেখা।
-আমার অবহেলায় যেদিন অভিমানে মুখ ফেরালে,
সেদিনই বুঝেছিলাম তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন আমার।
জানো, তারপর কোনোদিন বৃষ্টি হয় নি আমার বুকে,
বসন্ত আসে নি, আমাকে জড়াতে আকাশ থেকে নামে নি পূর্ণিমার চাদর।
-এভাবে বলো না অনিন্দ্য,
দুর্বল করো না আমাকে। আমার বদলে যাওয়া পৃথিবীর
খুব গোপনে তুমি আছো।
সেখানে কেউ যেতে পারে না।
মাঝে মাঝে আমিও পথ হারিয়ে ফেলি।
তোমার কাছে যেতে চায় না মন।
-আমি বিশ্বাস করি না।
তুমি মুখ লুকাতে পারো গভীর সমুদ্রের মতো দিগন্তের বুকে
স্মৃতিগুলোকে ছুঁড়ে দিতে পারো আকাশ গঙ্গার গহীন অন্ধকারে।
তবুও শিশির ভেজা চোখে স্মৃতিহীন গাঙচিল
ভরে দেবে বিষন্নতা। কান্না ভেজাবে চোখ।
স্বপ্ন উড়বে নির্জন ডানায়।
-বুকের প্রশস্ত জমিনে স্বপ্ন বোনা যায়। স্বপ্নেরা জেগে ওঠে
খেলা করে। কি অদ্ভূত ! তাই না অনিন্দ্য ?
-ঐন্দ্রিলা। কেমন আছো তুমি ?
-ওহ্ হো। রিকসা থেকে নেমেই তোমার সাথে কি সব কথা শুরু করেছি।
জানাই হলো না তুমি কেমন আছো
কোথায় থাকো এখন ?
-আমার আর থাকা। কালো মেঘ দেখেছো আকাশে ?
তার নিচেই থাকি আমি।
-হেয়ালি করো না তো অনিন্দ্য।
-ঘর বেধে কি হবে বলো ? কি প্রয়োজন তার,
বরং তোমার কথা শুনি।
কেমন আছো বললে না তো।
-তোমার অবহেলা আমাকে ভালো থাকার শক্তি যুগিয়েছে,
পৃথিবটিা সত্যিই গোল
তাই আবার দেখা হলো।
-বিদায় নেবে বুঝি !
তোমার ফেরার পথ কি রুদ্ধ করা যায় না ঐন্দ্রি ?
দ্বিখন্ডিত করো না এ পথ।
-অনিন্দ্য সত্যিই হাসালে তুমি।
যখন ভাবার কথা তখন ভাবো নি।
যে পথ দু’ভাগ হয়ে হাজার বছর হেঁটে গেছে
তাকে তুমি এক করবে কি করে ?
-আমি তবে তোমার কাছ থেকে হাজার বছর পিছিয়ে ঐন্দ্রিলা ?
যুগের পর যুগ আমি সে পথের পথিক।
-আমি অপেক্ষমান। পথিক তোমার পথ শেষ হোক ।