আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই ইউরিক অ্যাসিডের প্রাদুর্ভাব এখন খুব বেশিমাত্রায়। ইউরিক অ্যাসিড শরীরেই থাকে, কিন্তু যখন তার মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে যায় তখনই তার কুপ্রভাবে শরীর নানাভাবে অসুস্থ হয়। প্রধান কারণই হল খাদ্যাভ্যাসের এক বিরাট পরির্বতন। আজকাল অনেকেই বাইরের খাবার-দাবারে অভ্যস্ত। এর ফলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বিশেষত যারা নিয়মিত কোল্ডড্রিষ্কস খান বা মদ্যপান করেন তাদের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এক কথায় বলা যায় বেশী করে কোল্ড ড্রিষ্কস ও মদ্যপান ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারন।
যে সকল খাবারে ইউরিক অ্যাসিড বেশি
মাটন, বীফ, ডিম, মুসুর ডাল, টম্যাটো, সয়াবিন, বাদাম, পালংশাক, পুইশাক, কচু, সামুদ্রিক মাছ ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে বড় ভূমিকা নেয়। এছাড়া ইউরিয়া দিয়ে ভাজা যেসব সাদা মুড়ি সেগুলোও ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কীভাবে বোঝা যাবে
সাধারণত শরীরের কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে ভেঙে গিয়ে ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং তা কিডনির দ্বারা পরিশোধিত হয়। কিন্তু খাদ্যাভ্যাসের কারণে যখন এটি বিশেষ মাত্রায় পৌঁছয় তখন কিডনি আর তা পরিশোধন করতে ব্যর্থ হয় এবং রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। তখন ইউরিক অ্যাসিড গ্রন্থিগুলোতে গিয়ে জমা হয়। ইউরিক অ্যাসিডের সূক্ষ্ম দানাগুলো জয়েন্টগুলোকে ক্ষয় করে অসমান করে দেয়। ফলে ব্যথা-যন্ত্রণা শুরু হয়। হঠাৎ করে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখা যায় পায়ের বুড়ো আঙুল লাল হয়ে ফুলে গিয়ে যন্ত্রণা হচ্ছে। এটা খুব কমন এবং ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রথম চিহ্ন। কিন্তু এখন আমরা দেখছি অন্যান্য গ্রন্থি যেমন হাঁটু, গোড়ালির সন্ধিস্থল ইত্যাদি জায়গাগুলোতে বা আঙুলের গাঁটগুলোতেও ব্যথা হচ্ছে অর্থাৎ ইউরিক অ্যাসিডের দ্বারা ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে। সব গ্রন্থিগুলোতেই একই পদ্ধতিতে ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়ে জায়গাটার মসৃণতাকে নষ্ট করে এবড়ো-খেবড়ো করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিচ্ছে। এর থেকেও বড় কথা আমরা যদি ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে সাবধান না হই তাহলে তা হার্টের ভেসেল বা কিডনিরও ক্ষতি করতে পারে। অর্থাৎ শুধুমাত্র হাড় নয়, অন্যান্য জায়গাতেও ক্ষতি করে।
চিকিৎসা
ডাক্তার ইউরিক অ্যাসিড ধরা পড়লে প্রথমেই ওষুধ দেন না। ডায়েট কনট্রোলের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড কমানোর চেষ্টা করা হয়। যাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডায়েট কন্ট্রোল করেও ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য কমছে না তাদের ওষুধ দেওয়া হয়।
কারা আক্রান্ত হন
ইউরিক অ্যাসিড হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। সাধারণত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কম, কিন্তু একেবারে নেই তাও বলা যায় না। এটা সাম্প্রতিককালেই বেশি দেখা যাচ্ছে যার প্রধান কারণই হল জাষ্ক ফুড। এবং বিশেষ করে কোল্ড ড্রিষ্কস খাওয়ার প্রবণতা অত্যধিক বেড়ে গিয়ে এই অসুখ ডেকে আনছে।
কীভাবে প্রতিরোধ
প্রধানত জোর দিতে হবে সঠিক খাওয়া-দাওয়ার ওপর। সবুজ সবজি শরীরের উপকারে আসে। এছাড়া টম্যাটোও ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়। মাছের মধ্যে সামুদ্রিক মাছ। সুষম আহার গ্রহণ, জাষ্ক ফুড থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা এবং সেইসঙ্গে সচেতনতা, ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।