ঠিক সময়ে পৌঁছুতে পারিনি আজও;
দূর থেকেই দেখতে পেলাম দাঁড়িয়ে আছে রঞ্জনা।
কাছে যেতেই গম্ভীর মুখে বলে উঠল-
“বলতে পার, সাড়ে চার বছরে কত বার
দেখা হয়েছে আমাদের ?
মাত্র তের বার আর প্রতিবারই দেরী করেছো তুমি।
কে জানে, হয়ত আমার সাথে দেখা করতেই
ভালো লাগে না তোমার,
যদি তাই হয় তবে খুশি হতে পার-
মা-বাবা পাত্র খুঁজছেন, হয়ত খুব শীঘ্রই…
কি? তুমি খুশি হয়েছো তো?”
খুশি হবো নাকি দুঃখ পাবো- ঠিক বুঝে ওঠার আগেই
বলে ফেললাম, খুশি হবো না! হাজার হোক বন্ধুর বিয়ে তো।
“শুধুই বন্ধু ! আর কিছু নয়?
আমাদের দেখা না হয় হয়েছে খুবই কম কিন্তু
টেলিফোনের কল্যাণে এতটাই বেশি কথা হয়েছে
যা একজন মানুষকে বোঝার জন্য যথেষ্ট নয় কি?
যদি তুমি কপট না হয়ে থাক
তবে আমি ঠিকই বুঝেছি তোমায়, তুমিও কি বোঝনি আমাকে?
গত বছর আমার জন্মদিনে আমাদের ঘরের ছাদে
অসাবধানে ছুটতে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগেছিল আমার
তুমি ভেবেছিলে আমি জ্ঞান হারিয়েছি, কিন্তু বিশ্বাস কর
তোমাকে ঘাবড়ে দেবার জন্য আমি শুধু
জ্ঞান হারাবার ভান করেছিলাম।
আর সামান্য ঐ সময়টুকুতে তোমার চোখে মুখে
যে উৎকন্ঠা আর ব্যাকুলতা দেখেছি
‘তোমার কিছু হলে আমি বাঁচবো না’ -
যে আকুতি শুনেছি সে কি ভালোবাসা নয়?”
আমি তর্জনী দিয়ে রঞ্জনার ঠোঁট চেপে ধরে বলি-
কেন সুধাও আবার, বুঝেছো যখন সবই!
যতটা ভালোবাসলে সত্যিকারের প্রেমিক হওয়া যায়
ততটাই ভালোবেসেছি তোমাকে আমি; কিন্তু
যতটা সাহসী হলে সাগর পাড়ি দেয়া যায়
সাহসী হইনি ততটা ঠিক।
বুকের মাঝখানে, যেখানে হৃদয় থাকে সেই খানে যতটা
তীব্র করে তোমাকে বেসেছি ভালো
ততটা স্পষ্ট করে মুখ ফুটে বলতে পারিনি কখনও,
ভয় ছিল, পাছে যদি তোমার বন্ধুত্বও হারাই।
রঞ্জনা এবার নরম গলায় মিষ্টি করে বলে-
“যতবার তুমি দেরীতে এসেছো ততবারই আমি
করেছি তোমায় নিঃশর্ত ক্ষমা,
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে বিলম্ব হলে
থাকে না উপায় কোন সময়কে ফেরাবার।
এত ভালোবাসা বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখে
শুধু বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে করতে যদি আবারও দেরী-
তোমার রঞ্জনা হয়তো চলে যেতো অন্য কারো ঘরে
একাকী তোমাকে ভেবে চোখের জলে ভেজাতো বুক;
তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া
তোমারও কি থাকত কিছু করবার?”
রঞ্জনার হাতখানি ধরে চুম্বন করি আমি,
দিগ্বিজয়ী বীরের মত আকাশে-বাতাসে কম্পন তুলে বলি-
আজ আর বিলম্ব নয় কোন
পাখিরা, তোমরা গেয়ে ওঠো সব, ফুলেরা ছড়াও সুবাস
প্র্রজাপতিরা নেচে ওঠো আমাদের চারিদিকে
আকাশ তুমি বৃষ্টি দাও, আমার রঞ্জনাকে নিয়ে
আজ আমি ভিজব ভালোবাসায়।