পৃথিবী প্রবীণ আরো হ’য়ে যায় মিরুজিন নদীটির তীরে;
বিবর্ণ প্রাসাদ তার ছায়া ফেলে জলে।
ও-প্রাসাদে কারা থাকে? কেউ নেই— সোনালি আগুন চুপে জলের শরীরে
নড়িতেছে— জ্বলিতেছে— মায়াবীর মতো জাদুবলে।
সে-আগুন জ্ব’লে যায়— দহেনাকো কিছু।
সে-আগুন জ্ব’লে যায়
সে-আগুন জ্বলে’ যায়
সে-আগুন জ্ব’লে যায় দহেনাকো কিছু।
নিমীল আগুনে ওই আমার হৃদয়
মৃত এক সারসের মতো।
পৃথিবীর রাজহাঁস নয়—
নিবিড় নক্ষত্র থেকে যেন সমাগত
সন্ধ্যার নদীর জলে এক ভিড় হাঁস ওই— একা;
এখানে পেল না কিছু; করুণ পাখায়
তাই তা’রা চলে যায় শাদা, নিঃসহায়।
মূল সারসের সাথে হ’লো মুখ দেখা।
২
রাত্রির সংকেতে নদী যতদূর ভেসে যায়— আপনার অভিজ্ঞান নিয়ে
আমারো নৌকার বাতি জ্বলে;
মনে হয় এইখানে লোকশ্রুত আমলকী পেয়ে গেছি
আমার নিবিষ্ট করতলে;
সব কেরোসিন-অগ্নি ম’রে গেছে; জলের ভিতরে আভা দ’হে যায়
মায়াবীর মতো জাদুবলে।
পৃথিবীর সৈনিকেরা ঘুমায়েছে বিম্বিসার রাজার ইঙ্গিতে
ঢের দূর ভূমিকার পর;
সত্য সারাংসার মূর্তি সোনার বৃষের ’পরে ছুটে সারাদিন
হ’য়ে গেছে এখন পাথর;
যে-সব যুবারা সিংহীগর্ভে জ’ন্মে পেয়েছিলো কৌটিল্যের সংযম
তারাও মরেছে— আপামর।
যেন সব নিশিডাকে চ’লে গেছে নগরীকে শূন্য ক’রে দিয়ে—
সব ক্বাথ বাথরুমে ফেলে;
গভীর নিসর্গ সাড়া দিয়ে শ্রুতি বিস্মৃতির নিস্তব্ধতা ভেঙে দিতো তবু
একটি মানুষ কাছে পেলে;
যে-মুকুর পারদের ব্যবহার জানে শুধু, যেই দীপ প্যারাফিন,
বাটা মাছ ভাজে যেই তেলে,
সম্রাটের সৈনিকেরা যে-সব লাবণি, লবণরাশি খাবে জেগে উঠে’,
অমায়িক কুটুম্বিনী জানে;
তবুও মানুষ তার বিছানায় মাঝরাতে নৃমুণ্ডের হেঁয়ালিকে
আঘাত করিবে কোন্খানে?
হয়তো নিসর্গ এসে একদিন ব’লে দেবে কোনো এক সম্রাজ্ঞীকে
জলের ভিতরে এই অগ্নির মানে।