দেশে বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষ বিভিন্ন কিডনি রোগে ভুগছে। সাধারণত ৭০ শতাংশ পর্যন্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর একজন রোগি বুঝতে পারেন তার কিডনি সমস্যা। অনেক রোগী আবার বুঝতেই পারেন না যে তার কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশে ৪০ হাজারেরও অধিক মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ জন্য এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। ভেজাল খাদ্য পরিহার করতে হবে।
আবার ডায়াবেটিস এর সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকলে এক সময় কিডনি অকেজো হয়ে যায়। যে কারণে এবিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কারণেও কিডনি রোগে দেখা দিতে পারে। ভেজাল খাদ্য খেলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে ভেজাল মেশায়। এমন খাদ্যে গ্রহণ করলে লিভার ও কিডনিতে সমস্যা তৈরি হয়। কিডনি রোগের আরেকটি মূল কারণ অসচেতনতা, অপরিচ্ছন্নতা। অনেক স্কুলগুলোতে স্যানিটেশনের জন্য ভালো পরিবেশ নেই। যার ফলে অনেক সময় শিশুরা প্রস্রাব চেপে রাখে এবং ইনফেকশন হয়। এমন চলতে থাকলে এক সময় কিডনি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কিছু করণীয় রয়েছে আর পূর্ব থেকেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কোনো প্রাপ্তবয়স্ক বা ৫০ বছরের ওপরে লোকের উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, তার রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হচ্ছে কি না তা জানা এবং ডায়াবেটিস আছে কি না তা নিরূপণ করা প্রয়োজন। যদি কারো ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তার প্রস্রাবে অ্যালবুমিন ও মাইক্রো অ্যালবুমিন যাচ্ছে কি না এবং রক্তে ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক কি না তা অন্তত বছরে একবার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
এ ছাড়া জন্মের পর থেকে শিশুদের খাবারে পরিবর্তন আনতে হবে। বাসি, পচা বা খোলামেলা খাবার, ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস পরিহার করাই শ্রেয়। প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান, সবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। শিশুরা যেন মুটিয়ে না যায়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত চিনি ও লবণজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা, খেলাধুলা, দৌড়ানো ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এ ছাড়াও পরিবেশের সঙ্গে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের সম্পর্ক। বাতাসে সিসার পরিমাণ বেশি থাকলে, পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি হলে, শরীরে মার্কারি প্রবেশ করলে, সিগারেটের ধোঁয়া নাকেমুখে গেলে শিশুদের ক্রমান্বয়ে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগসহ ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই রোগ হওয়ার আগে সতর্কতামূলক বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কারো কিডনি রোগ হয়ে গেলে সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করা দুটিই জরুরি।