আজ ৪৩তম দিন, করোনার কারণে আমার এই ঘরবন্দি জীবনের। সকলের মতোই আমারও দিন কাটছে উদ্বেগে, আশংকায় ! কয়েক দফায় সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। অন্যদিকে আবার গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে; সারাদেশ থেকে দল বেঁধে মানুষ ফিরছে ঢাকায়।শপিংমল খুলে দেবার কথাও হচ্ছে। বুঝতে পারছি না, ঠিক কী হতে চলেছে! স্বাভাবিক জীবনে কবে ফিরতে পারবো জানিনা; নিশ্চিত করে আমরা কেউই হয়তো জানিনা, কবে ফিরতে পারবো দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত সেই কর্মজীবনে।
অনিশ্চয়তার এই দিনগুলোতেও যখন দেখি ফেসবুকের ওয়াল আর ইনবক্সে নানা রকমের মিথ্যে খবর, ভুল চিকিৎসা নির্দেশনা সম্বলিত তথ্য বা ভিডিও, আজগুবি টাইপের পরামর্শ, ভুয়া সংবাদের লিংক, গুজব ছড়ানোর অপকৌশল তখন মানুষের মনুষত্ব বোধ নিয়ে প্রশ্ন জাগে । আর যখন দেখি আমার চেনা-জানা, পরিচিত ও উচ্চ শিক্ষিত কিছু মানুষও রয়েছেন এ তালিকায়, তখন শুধু বিস্মিতই হই না,তাদের ব্যক্তিত্ব, রুচি আর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও প্রশ্ন জাগে। তাদের বেশির ভাগই কিন্তু সমাজের উঁচুস্তরে আসীন, দায়িত্বশীল(!) এবং বড় পদের অধিকারী। বিশ্বাসযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে প্রাপ্ত নয় জেনেও সেটা যেহেতু শেয়ার করেন তখন ধরেই নিতে হয়, তারা যা কিছুই দেখেন চোখ বন্ধ করে সরল মনে তাই বিশ্বাস করেন এবং আমাদেরকেও বিশ্বাস করাতে চান অথবা সব জেনে বুঝে বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়েই এগুলো শেয়ার করেন।
অনেক সময়েই দেখি নিজের কিংবা নিজ দল, গোষ্ঠী, দেশ বা অন্য যে কোনো কিছুকে উৎকৃষ্ট বা মহান প্রমান করার জন্য আজগুবি টাইপের মিথ্যে তথ্য প্রচার করা হয়। আমরা যাচাই বাছাই না করে প্রায়শ তা বিশ্বাসও করে ফেলি। আমি কিছুতেই বুঝিনা, পৃথিবীতে যা কিছু সত্যি মহান তার মহত্ব প্রমান করার জন্য মিথ্যে তথ্য কেনো প্রচার করার প্রয়োজন হয়? আজকের এই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সচেতন মানুষ যখন মিথ্যেটা বুঝে যায় তখন তার মহিমা কি তাতে একটু হলেও ম্লান হয়ে যায় না? যে কোনো কিছুর মহত্ব, উৎকর্ষতা, মহিমা কিংবা শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশের জন্য সত্যিটাই যথেষ্ট। মিথ্যে, বিকৃত বা অসম্পূর্ণ তথ্য, হুজুগ বা গুজব একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। মিথ্যেতো কোনো কিছুকে মহিমান্বিত করেই না বরং উল্টো তাকে গুরুত্বহীন করে, সন্দিহান করে, এমনকি কখনো কখনো কালিমাও লেপন করে।